আপনি কি জানেন - টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সির প্রথম ১৫ ম্যাচে শান্ত'র জয়ের পার্সেন্টেজ ছিলো ৫৭%, লিটনের শান্ত'র চেয়েও কম ৫৩%?
বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন লিটন দাশকে নিয়ে যে হাইপ উঠেছে সেটার মূলে রয়েছে - তার টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সির প্রথম ১৫ ম্যাচে ৮টি জয়ের ঘটনা, জয়ের পার্সেন্টেজ ৫৩%।
কিন্তু আপনি কি এটা জানেন, শান্তও তার প্রথম ১৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ক্যাপ্টেন্সিতে লিটনের সমান ৮টি জয় তুলে নিয়েছিল? অর্থাৎ শান্ত'র ক্যাপ্টেন্সির প্রথম ১৫ ম্যাচে জয়ের পার্সেন্টেজ ছিলো ৫৭%, কারণ একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বৃষ্টি না হলে এবং বাংলাদেশ ব্যাটিং করার সুযোগ পেলে শান্ত'র ম্যাচ জয়ের সংখ্যাটা ৯ হতো।
লিটন প্রথম ১৫ ম্যাচে শান্ত'র সমান ৮ম্যাচ জেতার কারণে লিটনকে আপনারা অতিরিক্ত হাইপ দিয়ে ফেললে তো শান্তকেও এমন হাইপ দেওয়া উচিৎ ছিলো, দু'জনের প্রতি সমান ইনসাফ না করতে পারলে তো শান্ত'র প্রতি জুলুম হবে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শান্ত তার টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সির প্রথম ১৮ ম্যাচের ১০টিতেই জিতেছিল, তখন জয়ের পার্সেন্টেজ ছিলো ৫৮.৮%(পরিত্যক্ত ম্যাচ হিসাবের বাহিরে)।
আমরা দেখলাম প্রথম ১৫ ম্যাচের পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে শান্ত লিটনের চেয়েও এগিয়ে ছিলো। আবার শান্ত'র প্রথম ১৮ ম্যাচ বিবেচনা করলেও শান্ত জয়ের পার্সেন্টেজে অনেক এগিয়ে ছিলো।
শান্ত যেমন তার টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সিতে অনেক বড়ো বড়ো পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন, লিটনের ক্ষেত্রে এখনো তেমনটি ঘটেনি। লিটন এখনো ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকার মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং হেভিওয়েট দলগুলোর বিপক্ষে বড়ো মঞ্চে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়নি।
শান্ত'র ক্যাপ্টেন্সিতেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকে টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছে। শান্ত'র ক্যাপ্টেন্সিতেই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে খেলেছে।
শান্ত'র ক্যাপ্টেন্সিতে বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ৪টি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩টি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১টি, সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ১টি, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে, সবগুলো আবার বিদেশের মাটিতে। উল্লেখিত সবগুলো দলই কিন্তু টি-টোয়েন্টির top ranked দল।
আবার শান্ত'র ক্যাপ্টেন্সিতে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে এবং বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে। সাথে বিদেশের মাটিতে আমেরিকার বিপক্ষে ৩টি, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১টি ও নেপালের বিপক্ষে ১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে।
শান্ত কোন কোন দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ক্যাপ্টেন্সি করেছেন সেটা দেখলেই আমরা বুঝতে পারি শান্ত ক্যাপ্টেন হিসেবে যথেষ্ট ভালো করেছেন। যদিও শান্ত'র টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সিতে সবচেয়ে বড়ো দাগ লেগেছে আমেরিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে, তবে মনে রাখতে হবে এই আমেরিকা বিশ্বকাপে পাকিস্তানকেও হারিয়েছে।
অন্যদিকে লিটনের ক্যারিয়ারেও এমন দাগ আছে - লিটনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আমেরিকার চেয়ে অনেক ছোটো দল আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে।
গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো - লিটনকে নিয়ে এখনই দর্শকদের ফ্যান্টাসিতে ভোগা ঠিক হবে না, কারণ লিটনের সামনে এখনও অনেক পথ বাকি।
আর দর্শকরা যদি এখনই লিটনকে সেরাদের আসনে বসিয়ে দেন তাহলে সেটা অন্যদের প্রতি জুলুম হবে। লিটন আগে ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, আফগানিস্তানের মতো দলগুলোর বিপক্ষে বাংলাদেশকে জয় এনে দিক, বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে বাংলাদেশকে অন্তত সুপার এইটে নিয়ে দেখাক, তারপরে না হয় লিটনকে সেরা বলা যাবে।