Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.

সবাই পাওয়ার হিটার হবে না, বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে: জুলিয়ান উড

আমাদের দলে পাওয়ার হিটার নেই’—বাংলাদেশের ক্রিকেটার, বিসিবির কর্মকর্তা, কোচ কিংবা সমর্থক, লাইনটি সবার মুখের বুলিই হয়ে উঠেছে। সবশেষ কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বদলে গেছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। বলে কয়ে ছক্কা মারতে পারা ব্যাটাররা সুনাম কুড়াচ্ছেন দুনিয়া জুড়ে—সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। বাংলাদেশের লিটন দাস, তাওহীদ হৃদয় কিংবা জাকের আলী অনিকরা যে সেই ঢঙের ব্যাটার নয় সেটা নতুন করে বলার হয়ত প্রয়োজন নেই। আন্দ্রে রাসেল, নিকোলাস পুরান কিংবা হেনরিখ ক্লাসেনের তুলনায় শারীরিক সামর্থ্যে যে বাংলাদেশের ব্যাটাররা পিছিয়ে সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই লিটনদের পাওয়ার হিটিং শেখানোর কথা জানিয়েছিলেন জেমি সিডন্স। উল্টো তিনিই চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। টি-টোয়েন্টির বাজারে চার-ছক্কার গুরুত্ব বুঝে বিসিবিও উপায় খুঁজছে। যারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করতে আসছেন জুলিয়ান উড রস। আরো পড়ুন পাঞ্জাবের হয়ে কাজ করার সময় জুলিয়ান উড ১০ আগস্ট বাংলাদেশে আসছেন পাওয়ার হিটিং কোচ ইংল্যান্ডের ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটিং বদলে দেয়া জুলিয়ান পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবেই বেশ পরিচিত। আইপিএলের পাঞ্জাব কিংস, বিপিএলের সিলেট সানরাইজার্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সেও কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা আছে বিগ ব্যাশ ও পিএসএলে কাজ করারও। সেই ইংলিশ কোচই দায়িত্ব নিচ্ছেন লিটনদের বদলে দেয়ার, পাওয়ার হিটিং শেখানোর। তিন সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার আগে ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে আলাপকালে দেশের ক্রিকেটারদের পাওয়ার হিটিংয়ের সামর্থ্য ও নিজের কর্ম পরিকল্পনার ধারণা দিয়েছেন জুলিয়ান। ক্রিকফ্রেঞ্জি— এখন তো দুনিয়া জুড়েই পাওয়ার হিটিং নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আপনি নিজেও একজন পাওয়ার হিটিং কোচ। আদৌতে পাওয়ার হিটিংটা কী, একটু বলবেন? আরো পড়ুন ফাইল ছবি এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সব ম্যাচ আবুধাবিতে জুলিয়ান উড— দেখুন, সবশেষ কয়েক বছরে ক্রিকেট বদলে যাওয়ার পাওয়ার হিটিং ব্যাটিংয়ের বড় একটা অংশ হয়ে গেছে। বিশেষ করে আধুনিক যুগে এসে এটার গুরুত্ব বেড়ে গেছে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন টি-টোয়েন্টিতে কিছু খেলোয়াড়ই আছে যাদের কাজ হচ্ছে এসেই চার-ছক্কা মারা। এটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে যে প্রত্যেকটা দলেই পাওয়ার হিটারদের প্রয়োজন। আবার আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে সবাই পাওয়ার হিটার হবে না। আপনার এমন ব্যাটার প্রয়োজন যারা কিনা অনায়াসে বল বাউন্ডারি পার করতে পারে। Sponsored ক্রিকফ্রেঞ্জি — বাংলাদেশের ব্যাটাররা তো শারীরিকভাবে একটু পিছিয়ে। তারা এই পাওয়ার হিটিংয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে বলে মনে হয়? জুলিয়ান উড—হ্যাঁ, এটা সত্য যে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা শারীরিকভাবে এত লম্বা গড়নের নয়। দৈহিকভাবে একটু সামর্থ্যবান হলে তাদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। আপনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের দিকে তাকালেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। জন্মগতভাবেই তারা ভিন্নভাবে বেড়ে ওঠে। তাদের মধ্যে স্কিল আছে, পাওয়ারও আছে। তারা দ্রুত এটার সঙ্গে মানিয়েও নিতে পারে। তাদের শুধুমাত্র যথেষ্ট পাওয়ার প্রয়োজন। আমার কাজ হচ্ছে খেলোয়াড়দের এটা শেখানো যে কিভাবে তারা শরীর ব্যবহার করে আরও শক্তির যোগান দিতে পারে। আপনি যদি তাদের মাঝে পাওয়ার, স্কিল এসব ব্যাপার ইনজেক্ট করতে পারেন তাহলে তারা অবশ্যই পাওয়ার হিটিং করতে পারবে। যারা একটু ছোট গড়নের ক্রিকেটার তারাও বড় বড় ছক্কা মারতে পারে। তাদের মুভমেন্ট, ছন্দ, টাইমিং—এগুলো ধারাবাহিক থাকতে হবে। তাহলে তারাও জোরে মারতে পারবে। ক্রিকফ্রেঞ্জি —এক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা কী? জুলিয়ান উড—আমার ভূমিকার কথা তো বললামই। ফিল সিমন্সের সঙ্গে আমার এখনো কথা হয়নি। দলের সঙ্গে কাজ করার আগে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথা চিন্তা করলে পুরো দুনিয়ায় স্ট্রাইক রেটের একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ড আছে। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ বর্তমানে সেটার নিচেই আছে। আমার প্রধান লক্ষ্যটা হবে তাদের স্ট্রাইক রেট বাড়ানো। সেই সঙ্গে ব্যাটিং ইউনিটকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে চাই যাতে প্রতিপক্ষ দেখে ভয় পায়। তাদের ভেতর ওই ব্যাপারটা যোগ করতে হবে। সেটা টপ অর্ডার হোক কিংবা মিডল অর্ডার। ক্রিকফ্রেঞ্জি —এটার জন্য কী ধরনের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন? জুলিয়ান উড—আমার মনে হয় না আমি খুব বেশি পরিবর্তন করব। খেলোয়াড়দের যা আছে সেটার সঙ্গে হয়ত আমি কিছু জিনিস যোগ করব। আমার ব্যাপারটা হচ্ছে, আমি খেলোয়াড়দের পুরোপুরি বদলে দিতে চাই না। কারণ তারা সবাই খুবই স্কিলফুল। তাদের হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশনও বেশ ভালো। কিন্তু আমি অবশ্যই কিছু জিনিস তাদের ব্যাটিংয়ে যোগ করব যাতে রান করার জন্য আরও বেশি স্কোরিং অপশন পায়। ক্রিকফ্রেঞ্জি— কিন্তু একজন ক্রিকেটারের পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য ২১ দিন কী যথেষ্ট সময়? জুলিয়ান উড—অবশ্যই, ২১ দিন যথেষ্ট সময়। এটা পুরোপুরি একটা প্রক্রিয়ার বিষয়। আপনি এটা যত বেশি করবেন তত ভালো হয়ে উঠবেন। এশিয়া কাপের আগে এটা একটা ভালো প্রস্তুতি। যেটা বললাম এটা একটা প্রক্রিয়ার বিষয়। আশা করি আমরা পার্থক্যটা দেখতে পারব। তারা যদি এশিয়া কাপে এটা কাজে লাগাতে পারে তাহলে ভালো হবে। তবে আমার চাওয়া থাকবে বিশ্বকাপে যেন তারা সেটার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। ক্রিকেটার, কোচ এবং কোচিং স্টাফকে প্রক্রিয়াটাকে বিশ্বাস করতে হবে। ক্রিকফ্রেঞ্জি— আমরা তো রাতারাতি আন্দ্রে রাসেল কিংবা নিকোলাস পুরান হয়ে উঠতে পারব না। সেক্ষেত্রে আমরা কোন পথ অনুসরণ করব? জুলিয়ান উড— আমি আগেও বলেছি বাংলাদেশি ব্যাটাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের মতো শারীরিকভাবে এতটা এগিয়ে নয়। কিন্তু তাদের স্কিল লেভেল যদি আপনি দেখেন তাহলে সেটা খুবই ভালো। তাদের বেশিরভাগই ছন্দ, টাইমিং এবং মুভমেন্টের উপর নির্ভর করে। যেমনটা আমি বললাম শারীরিকভাবে তাদের সেই সক্ষমতা নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় আপনি সঠিকভাবে অনুশীলন করলে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন না। ক্রিকফ্রেঞ্জি—ভিন্ন ভিন্ন পজিশনের ব্যাটারদের নিয়ে আপনি কিভাবে কাজ করবেন। ধরুণ একজন টপ অর্ডার ব্যাটার আরেকজন হয়ত মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করে জুলিয়ান উড—আমার মনে হয় যারা খেলবে তাদের কার কী রোল সেটা আপনার জানা থাকতে হবে। আপনি যদি একজন টপ অর্ডার হউন তাহলে আপনাকে যতটা সম্ভব পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে হবে। আমি সেটা আগেও বলেছি—আপনার ভেতর ভয় ধরানোর ওই ব্যাপারটা থাকতে হবে। টপ অর্ডারের মতো আপনার মিডল অর্ডার ব্যাটারও প্রয়োজন। মিডল অর্ডারে যারা ব্যাটিং করে তারা একটু দেখেশুনে খেলে। সবসময় আপনাকে স্ট্রাইক রোটেট করার উপর থাকতে হবে, এমনকি টি-টোয়েন্টিতেও। কিন্তু আপনি যদি একটা বাউন্ডারি মারতে পারেন এবং বাকি পাঁচ বলে সিঙ্গেল নিতে পারেন তাহলে এক ওভারে ৯ রান আসবে। এরপর শেষের দিকে এসে আপনার পাওয়ার হিটিং করতে হবে। আমার মনে হয় এটাই আসলে সবকিছু। সবার আগে আপনাকে খেলোয়াড় খুঁজে বের করতে হবে, তাদের ভেতরে কী আছে এবং তাদের জন্য কোন রোলটা কাজে দেবে সেটা ঠিক করতে হবে। ক্রিকফ্রেঞ্জি— যারা একটু ক্লাসিক্যাল ঘরানার ব্যাটার যেমন শাই হোপ। তাদের ক্ষেত্রে পাওয়ার হিটিংটা কিভাবে কাজ করে? জুলিয়ান উড—যারা ক্লাসিক্যাল ব্যাটার তারা একটু ভিন্নভাবে করতে পারে। আপনি শাই হোপের কথা বললেন, পিএসএলে আমি তার সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু পিএসএলে সেটা তাঁর কাজে আসেনি। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে সে ৪৪ বলে সেঞ্চুরি করেছে। তাঁর ভেতর সেই সক্ষমতা আছে। যারা ক্লাসিক্যাল ঘরানার ব্যাটার তারা নিজেদের গিয়ার পরিবর্তন করতে থাকে। ধরুণ, এখন সে গিয়ার ওয়ানে ব্যাটিং করছে একটু পর গিয়ার টুতে যাবে। এভাবেই থ্রি, ফোর কিংবা ফিফথ গিয়ারে ব্যাটিং করতে। এই ধরনের ব্যাটাররা একটু আস্তে আস্তে নিজেদের গিয়ার পরিবর্তন করে। আবার আপনি যদি গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের কথা বলেন সে এমন ব্যাটার যে কিনা ওয়ান থেকে সরাসরি গিয়ার ফাইভে চলে শিফট করে। এজন্য আপনাকে দেখতে হবে যাকে নিয়ে আপনি কাজ করছেন তাঁর ভেতরে কোনটা করার সামর্থ্য আছে। সে কী গিয়ার ওয়ান থেকে ফাইভে যেতে পারবে নাকি গিয়ার ওয়ান থেকে থ্রিতে খেলতে পারে। ক্লাসিক্যাল ব্যাটারদের কথা যেটা বললাম তারা ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর অ্যান্ড ফাইভ—এভাবে এগোয়। আপনাকে ওই খেলোয়াড়ের সামর্থ্য এবং রোলটা খুঁজে বের করতে হবে। ক্রিকফ্রেঞ্জি—শেষ প্রশ্ন, ক্রিকেটারদের কাছ থেকে আপনি কী ধরনের ফিডব্যাক প্রত্যাশা করছেন? জুলিয়ান উড—আমি চাই খেলোয়াড়রা এটা বুঝতে পারুক তাদের সমস্যা আছে। আপনি যদি বিশ্বের সেরা তিন দল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের দিকে তাকান তাহলে টি-টোয়েন্টিতে তারা বেশ এগিয়ে। তাদের সঙ্গে তুলনা করলে অবশ্যই বড় একটা পার্থক্য আছে। আমি আগেও বলেছি বাংলাদেশের ব্যাটারদের স্ট্রাইক রেট সারা বিশ্বের সঙ্গে মেলালে তারা অনেক পিছিয়ে। আপনাকে ওই লেভেলে যেতে হবে। এবং আমার কাজই হবে তাদের সেই জায়গাতে নিয়ে যাওয়া। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, খেলোয়াড়দের এটা বুঝতে হবে তাদের সমস্যা আছে এবং সেরাদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে ভিন্নভাবে কিছু একটা করতে হবে।

About CricketBuzz

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.